বাড়িওয়ালার দাজ্জাল মেয়ে ❤ পর্বঃ9

 


বাড়িওয়ালার দাজ্জাল মেয়ে ❤

পর্বঃ9

লেখক: সানভি আহম্মেদ আবির ❤


আমি পিছন ফিরে তাকাতেই মধুকে দেখে অভাক হয়ে যাই।

মধুও যে কম অভাক হয়নি তা নয়।

মধু আমাকে দেখে আমার কাছে চলে আসতে চাইলো কিন্তু হঠাৎ কেন জানি কোন অজানা বাধার কারনে থেমে গেলো।

দুজনের মধ্যে কোন কথা নাই। মধু এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমিও মধুর দিকে তাকিয়ে আছে।

মধু এই ভার্সিটিতে কি করে? আর এই সন্তান কার? আমার না সুভাষএর? এই সব কনফিউজড নিয়ে ভাবছি।

হঠাৎ আম্মু বলে বাচ্চাটি আওয়াজ করলো।

ঃআমার মেয়েকে দিন?(মধু)

ঃএটা তোমার বাচ্চা?

ঃহ্যা 

ঃনাম কি ওর?

ঃ সিমরান।

এই বলে মধু আমার কোল থেকে সিমরান কে নিয়ে চলে গেলো। আমি ওর দিকে চেয়ে আছি। খেয়াল করলাম মধু চোখের উপর হাত ঘসছে।

মনেহয় চোখের পানি মুসছে কিন্তু পিছন থেকে আমি দেখতে পাচ্ছি না।

ওর মেয়ের নাম সিমরান। খুব সুন্দর নাম।

সিমরান!

এটাতো আমার পছন্দ করা নাম।একদিন আমি ওকে বলেছিলাম। 

ঃমধু জানো আমাদের মেয়ে হবে। 

ঃকিভাবে বুঝলা?

ঃআমার বিশ্বাস। আর আমার মেয়ের নাম সিমরান রাখবো। পরে কোন ঝামেলা করতে পারবে না।

ঃঠিক আছে মেয়ে হলে তোমার পছন্দ করা নাম রাখবে আর ছেলে হলে আমি নাম রাখবো।

ঃঅকে।

তারমানে সিমরান আমার মেয়ে। আর মধু আমার মেয়েকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছে। ও সুভাষ কে বিয়ে করেনি।

এই কথা গুলো ভেবে খুব খুশি হলাম। পরক্ষণেই মধুর এমন বিহেভ দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। 

ও এখনো আমাকে ভালবাসে না। যফি ভালবেসে থাকতো তাহলে আমার কাছে চলে আসতো। সিমরান কে নিয়ে চলে যেতো না।

আমি কিছু ভেবে পাচ্ছিনা। আমার মাথা ঘুরোচ্ছে।

এখান থেকে বের হয়ে মধুকে খুজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না।

শেষমেষ হতাশ হয়ে বন্ধুদের সাথে চলে আসলাম। 

ঃকিরে বন্ধু এতো মনমরা কেন?

ঃকই মনমরা। আমি ঠিক আছি।

ঃতা আবার জার্মানি চলে যাবে নাকি?

ঃনা আর যাবো না।

তারপর তাদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে বাড়িতে চলে আসলাম। 

এদিকে আমায় দেখার পর মধু বাসায় গিয়ে প্রচুর কান্না করতে লাগলো।

মধুর কান্না শুনে আংকেল এসে বললেন 

ঃকিরে মা আজ এতো বেশি কান্না করস কেন?

ঃআব্বু আমি ফাহাদকে দেখেছি?

ঃকিহ কোথায় আর কখন?

ঃআব্বু ভার্সিটিতে সমাবর্তনে দেখছি। সিমরান ওর কোলে ছিলো। ঃ তাহলে ফাহাদকে তোর মনের কথা বললে না?

ঃআব্বু কিভাবে বলবো অকে। সেই মুখ কি আর আছে আমার? 

ও আমাকে এখন কখনো বিশ্বাস করবে না আব্বু(কেদে কেদে)

ঃআচ্চা আমি ফাহাদের সাথে কথা বলে দেখি?

ঃনা আব্বু তুমি কিছু বলিও না।

আমি যেই পাপ করেছি সেই পাপের শাস্তি আমি পাচ্ছি। আর পেতেও চাই। আমি সারাজীবন ফাহাদকে ভালবেসে যাবো। তবে দুর থেকে। ওকে কখনো বুঝতে দিবো না।

আমি ভার্সিটি থেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বের হচ্ছি।

তারপর সবাই একে একে বিদায় হলো।

আমি বাড়ির দিকে হাটা দিচ্ছি।

এমন সময় পিছন থেকে লিমন ডাক দিলো।

বন্ধু শোন।

আমাদের বাসায় কবে আসবে? 

ঃযাক না কিছু দিন?

ঃকিছুদিন মানে কি? তুই আগামী কালকেই আসবি।

ঃআচ্চা ঠিক আছে।

তারপর বাসায় ফিরছি। মধুর কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। আজ বার বার শুধু মেয়েটার কথা মনে পড়ছে। সিমরান আমার মেয়েতো? আল্লাহ সিমরান যেন আমার মেয়ে হয়। আমি তোমার কাছে আর কিছু চাচ্ছি না। প্লিজ তুমি আমাকে সিমরান আমার কাছে দিয়ে দাও। আমি সিমরানকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিবো।

বাস ছেড়ে দিসে। ড্রাইভার গাড়ি থামান আমি নামবো। আমাকে নামিয়ে দিন।

সাথে সাথে বাস থেকে নেমে পড়লাম। সিমরানকে ছাড়া আমি বাসায় যেতে পারছিনা। বুকের বা পাশে খুব ব্যথা করছে।

মধু চলে যাওয়ার পর এই ব্যথা করেছিলো কিছুদিন। তারপর আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়েছিলো। কিন্তু আজ খুব বেশি ব্যথা করছে সিমরান এর জন্য।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ৮ টা বাজে। আশেপাশে কোন রিক্সা বা গাড়ি দেখতে পেলাম না। তাই আমি দৌড়ানো শুরু করলাম।

আধা ঘন্টা পর মধুদের বাসার সামনে গিয়ে পৌছলাম। 

এই বাসাটা একসময় খুব পরিচিত ছিলো। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে এটা অপরিচিত হয়ে উঠেছে। 

গেটের ভিতর প্রবেশ করে ঘরেএ বাহির থেকে সিমরান বলে চিতকার করলাম।

আমার চিতকার শুনে আংকেল আর মধু বাহিরে আসলেন।

মধু আমার দিকে এক নাগাড়ে চেয়ে আছে। 

ঃবাবা তুমি এসেছো। কোথায় ছিলে এতোদিন?

ঃআংকেল আমার মেয়ে কই? সিমরান আমার মেয়েতো? 

ঃহা সিমরান তোমার মেয়ে আর ঘরে আছে।

ঃআমি দৌড়ে গিয়ে সিমরানকে কোলে নিয়ে চুমু খেতে লাগলাম। 

আমার চোখদিয়ে অঝর দ্বারা বইছে।এটা দুঃখের কান্না নয় এটা শুখের কান্না।

ঃ নানু ভাইয়া এটা তোমার আব্বু।

তুমি প্রতিদিন আম্মুকে জ্বালাতে না আব্বু কখন আসবে। আজ দেখো সত্যি সত্যি তোমার আব্বু চলে আসছে।

এই কথা শুনার পর সিমরান আমার কোল থেকে নেমে চলে যাচ্ছে।

ঃআম্মু তুমি চলে যাচ্ছো কেন?

আব্বুর কাছে আসবে না?

ঃআমাল আব্বুল দলকাল নেই। তুনি অনেক পতা। এতোদিন কোতায় তিলে? 

ঃমামনি আমি আর তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাবো না।সবসময় তোমার কাছে থাকবো।

ঃসিমরান আমার কোলে বসে আছে।

ঃতুমি যাবে আমার সাথে?

ঃসিমরান মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলল।

তাহলে চল আম্মু। তোমাকে আমি খুব আদর দিবো।তোমার আম্মুর কাছে আমার কথা বলায় আম্মু তোমাকে বকা দেয় তাইনা। এখন থেকে আমি তোমাকে কখনো বকা দিবো না।

আমি সিমরানকে নিয়ে চলে আসছি।

কিন্তু সামনের দিকে যেতে পারছিনা কেন?

পায়ের দিকে চেয়ে দেখি মধু আমার পা ধরে নিচের দিকে চেয়ে কান্না করছে।

ঃআরে আরে আপনি আমার পা ধরে আছেন কেন?

ঃকোন কথা বলছে না।

ঃপা ছাড়ুন আমি আমার মেয়েকে নিয়ে বাসায় যাবো। পরে দেরি হলে গাড়ি পাবো না।

ঃপ্লিজ তুমি যেওনা। আমাকে আমার মেয়ে থেকে আলাদা করনা।

ঃকেন তুমিই

ঃহ্যা মানছি আমি বলেছিলাম আমি এই মেয়েকে চাই না। আমি ওকে নস্ট করে দিতে চাইছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আর আমি আমার পাপের ফল ভোগ করছি এই একা একা। হা এতে আমার কোন অসন্তুষ্ট নয়। কেননা পাপ করছি তার শাস্তিতো আমাকে পেতেই হবে।

কিন্তু আমাকে তুমি এতো বড় শাস্তি দিও না প্লিজ। আমি এই শাস্তি নিতে পারবো। তুমি আমাকে যখন ছেড়ে চলে গেছো তখন থেকে সিমরান ই আমার সব কিছু।

প্লিজ তুমি ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিও না।

ঃএই যে হ্যালো আমি তোমাকে ভহেড়ে যাইনি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে।

ঃআর তুমি এতো মেয়ে মেয়ে করছো কেন?

ঃহা আমিই ছেড়ে চলে গেসিলাম।

ঃপ্লিজ তুমি আমাকে আটকাইও না। শোন এই মেয়ে ছাড়া আমার আর কিছু নাই। আর কিছু চাইও না। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে চাই।

তোমরা ট্রাই করলে আরেকটা বেবি নিতে পারো। তাও প্লিজ আমাকে সিমরান দিয়ে দাও।

ঃআরেকটা বেবি নিবো মানে! (অভাক হয়ে)

ঃকেন সুভাষ আছে না। ওকে বললেই তো হয়।

ঃসুভাষের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নাই। আর ওর সাথে আমার আপত্তি কর কোন ধরনের সম্পর্ক হয়নি। তার আগে আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।

ঃদেখুন সুভাষের সাথে তোমার কি ধরনের সম্পর্ক আছে তা আমি জানার কোন প্রয়োজন বোধ করি না। আমাকে যেতে দাও। আমি চললাম।

ঃফাহাদ একটা কথা রাখবে আমার?

ঃকি বলো।

ঃআমি যে পাপ করছি তাতে আমি তোমার কাছে কখনো ভালবাসার দাবি নিয়ে যাতে পারবো না। আর আমি যাবোও না। কিন্তু একজন মা হিসেবে নিজের সন্তানের থেকে দুরে থাকতে পারবো না। প্লিজ তুমি আমাকে তোমার সাথে রাখো। তুমি চাইলে আরেকটা বিয়ে করে নিও। আমু কোন বাধা দিবো না। খুশি খুশি তোমাদের বিয়ে করিয়ে দিবো। যেকোনো কিছুর বিনিময়ে আমি আমার মেয়ের কাছে থাকতে চাই।যদি তুমি তোমাদের বাসার কাজের নেয়ে হিসেবে রাখো তবুও আমি কোন আপত্তি করবো না।

ঃআমি কিছু না বলে নিজের বাসায় চলে আসলাম। 

কি বলবো আমি। মধুর কান্না করে কথা গুলি শুনে আমার কেমন জানি মায়া লাগতেছে কিন্তু আমি তা চাই না।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার মেয়েকে গোসল করাচ্ছি পুকুরের ঘাটে। 

এমন সময় দেখি একটা গাড়ি থেকে মধু আর আংকেল নামছে?

!


!

waiting for next part.

3 Comments

Post a Comment
Previous Post Next Post